নিউজজি প্রতিবেদক ১৯ নভেম্বর , ২০১৯, ১১:৪৫:৩৮
‘তার কোনো ভণিতা ছিল না, একটু রাগ ছিল’
“বাবা সবসময় বলতেন, ‘আমি কী জিনিস, সেটা আমি যখন থাকব না, তোমরা বুঝবা।’ আসলেই আমরা এখন বুঝতেছি। তার বর্ণাঢ্য জীবনকে, শ্রদ্ধাভরে আমাদের উদযাপন করারই কাজ। তিনি চেষ্টা করেছেন, লড়াই করেছেন, ফেরার জন্য; কিন্তু পারেননি। তিনবার কার্ডিয়ার অ্যারেস্ট, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স, সব কিছু তার হৃদযন্ত্রকে শেষ করে দেয়।”
বিষাদের সুরে কথাগুলো বলছিলেন প্রয়াত বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দীর মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী। নিউজজি’র সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি বাবার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিচারণ করেন।
তারকা সুবীর নন্দীকে সবাই চেনেন, জানেন; কিন্তু পারিবারিক জীবনে তিনি কেমন ছিলেন? জবাবে ফাল্গুনী বলেন, ‘পারিবারিক জীবনেও তিনি একই রকম ছিলেন। বাইরে তাকে সবাই যেরকম দেখেছেন, আমাদের কাছেও তিনি সেরকমই। বাইরে এবং পরিবারে তিনি একই ভূমিকা রাখতেন। তার কোনো ভণিতা ছিল না, একটু রাগ ছিল। যেটা সবার মধ্যেই থাকে। আমাকে বলতেন, ‘‘সম্মানটাই বড় ব্যাপার। সবসময় মাথানত করে থাকতে হয়। বিনয়ী থাকতে হয়।’’ এখন আমার কানে ভাসে সেই কথাগুলো।’
সুবীর নন্দী অসুস্থ থাকাকালীন তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা করেছেন। সেই বিষয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফাল্গুনী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। দেশবাসী এতো এতো ভালোবাসা দিয়েছেন- সবার প্রতি আমার ও আমার পরিবারের কৃতজ্ঞতা।’
ফাল্গুনী আরও বলেন, ‘আমি সবসময় গর্ব করতাম আমার বাবাকে নিয়ে, এখনো করি, আগামীতেও করব। উনাকে কেউ ভুলবে না; আমাকেও কেউ ভুলে যাবে না, উনার মেয়ে হিসেবে আমাকেও সবাই মনে রাখবে। আমার বাবার যতগুলো কাজ আছে, সেগুলো যদি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে আমরা নিজেদের উদ্যোগে একটা সংরক্ষণাগার করব। কারণ আমার কাছে আমার বাবার এত ছবি নাই, মানুষের কাছে যত ছবি। সেগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করছি।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ মে মৃত্যুবরণ করেন দেশীয় সঙ্গীতের অন্যতম গুণী ও কালজয়ী শিল্পী সুবীর নন্দী। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে– ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘তুমি এমনই জাল’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘পাখি রে তুই’, ‘কতো যে তোমাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’ , ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, ‘নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে’ এবং ‘বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’ অন্যতম।
উল্লেখ্য, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী চলতি বছরের ৭ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
নিউজজি/এসএফ