নিউজজি ডেস্ক ১১ ফেব্রুয়ারি , ২০২১, ১০:৩৭:৪৫
ছবি : সংগ্রহ
ঢাকা : মধুর চেয়ে আছে মধুর, সে এই আমার দেশের মাটি, / আমার দেশের পথের ধুলো, খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি। লাইন দুটি বাঙালি কবি ও ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের। বাংলা সাহিত্যে যিনি ছন্দের যাদুকর বলে আখ্যায়িত। তার কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহার অভূতপূর্ব। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তার কবিতায় ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
আজ এ ছন্দের যাদুকরের শুভ জন্মদিন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার অদূরে নিমতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান-এর চুপী গ্রামে।
সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন।
মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী।
সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৯৯ সালে কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং জেনারেল ১৯০১ সালে অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফ.এ পাস করেন।
কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি।
প্রথম জীবনে সত্যেন্দ্রনাথ মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন।
বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে কবিতা লিখেছেন।
১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়।
সত্যেন্দনাথ আরবি-ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। সমাজের অবহেলিত, অস্পৃশ্য ও সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন।
মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরলোকগমন করেন।
সাহিত্যকর্মে ছন্দের রাজা সত্যেন্দনাথ দত্ত তার এ স্বল্প জীবনে ১২টির উপর কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। তম্মধ্যে সবিতা (১৯০০), সন্ধিক্ষণ (১৯০৫), কুহু ও কেকা (১৯১২) বেলা শেষের গান (১৯২৩) উল্লেখযোগ্য।